নদীমাতৃক বাংলার ভূমি চিরদিনই প্রকৃতির অকৃপণ আশীর্বাদে পরিপুষ্ট । এখানকার কৃষিভূমি বেশ উর্বর। মধ্যযুগে এখানকার উৎপন্ন ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ধান, গম, তুলা, ইক্ষু, পাট, আদা, জোয়ার, তিল, শিম, সরিষা ও ডাল। কৃষিজাত দ্রব্যের মধ্যে পিঁয়াজ, রসুন, হলুদ, শশা প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য । আম, কাঁঠাল, কলা, মোসাব্বর, খেজুর ইত্যাদি ফলমূলের ফলনও ছিল প্রচুর। পান, সুপারি, নারকেলও প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হতো । গালা বা দ্রাক্ষাও উৎপন্ন হতো প্রচুর । মুসলমান শাসনের সময় থেকেই বাংলায় পাট ও রেশমের চাষ শুরু হয়।
বাংলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল উৎস ছিল কৃষি । কৃষি ফলনের প্রাচুর্য থাকলেও এ সময়ের চাষাবাদ পদ্ধতি ছিল অনুন্নত । আধুনিক সময়ের মতো পানি সেচ ব্যবস্থা সে যুগে ছিল না । কৃষককে অধিকাংশ সময়েই সেচের জন্য বৃষ্টির ওপর নির্ভর করতে হতো। কৃষিপ্রধান দেশ বলে বাংলার অধিবাসীর বৃহত্তর অংশ ছিল কৃষক । বাংলার মাটিতে কৃষিজাত দ্রব্যের প্রাচুর্য ছিল । ফলে উদ্বৃত্ত বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হতো। এ ব্যবসায়িক তৎপরতা কালক্রমে শিল্পের ক্ষেত্রেও প্রসারিত হয়। মুসলমান শাসনকালে বঙ্গে বস্ত্র শিল্প, চিনি শিল্প, নৌকা নির্মাণ কারখানা ইত্যাদি গড়ে উঠেছিল ।
বস্ত্র শিল্পে বাংলার অগ্রগতি ছিল সবিশেষ উল্লেখযোগ্য । এখানকার নির্মিত বস্ত্রগুলো গুণ ও মানের বিচারে যথেষ্ট উন্নত ছিল । তাই বিদেশে এগুলোর প্রচুর চাহিদা ছিল। নিজেদের ব্যবহারের জন্য রঙিন কাপড় এবং বিদেশে রপ্তানি করার জন্য সাদা কাপড় এখানে তৈরি করা হতো। ঢাকা ছিল মসলিন নামক বিশ্বখ্যাত সূক্ষ্ম বস্ত্র শিল্পের প্রধান প্রাণকেন্দ্র। ইউরোপে এর প্রচুর চাহিদা ছিল। এ বস্ত্র এত সূক্ষ্ম ছিল যে, ২০ গজ মসলিন একটি নস্যির কৌটায় ভরে রাখা যেত। পাট ও রেশমের তৈরি বস্ত্রেও বাংলার কৃতিত্ব ছিল উল্লেখযোগ্য । বাংলায় চিনি ও গুড় তৈরি এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে ।
Read more